সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

2021 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

"যা জান, তাই লেখ।"

 "যা জান, তাই লেখ।"  এই কথাটি যে কত মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে তার হিসেব নেই। লেখালেখিটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। এটা অনেক সময়েই তাগিদ। যারা পেশাগত লেখক তাদের কথা বলছি না। শিবরাম বাবু একবার বলেছিলেন, কলম ঠেলা আর রিক্সা ঠেলার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। আমি বলছি আমার মত সৌখিন মানুষদের কথা যারা লেখালেখি করি নিজের মনের খাদ্য জোগাড় করার জন্য। এটা আমাদের একটা বিলাসিতাও বলা যায়। গাড়ি নিয়ে যেমন হাওয়া খেতে বেরনো হয়, তেমনি কিছু একটা। কিন্তু তার জন্য অনেক মেহনত করে একটা গাড়ি কিনতে হয় আগে। এই যে চাকরিটা করি, সেটা দিনের শেষে বাংলা লিখতে পারার অধিকারের জন্য। এটাই সার কথা। সখের লেখা লিখি বলে আমার কোনও দায়বদ্ধতা নেই কল্পনাকে বেশি কষ্ট দেয়ার। তাতে দুটো সুবিধে হয়। বেশি বুদ্ধি খাটাতে হয় না, আবার বেশ গড় গড় করে লিখে যাওয়া যায়। লেখাটা হয়ে গেলেই বন্ধুদের ওয়াটসআপ গ্রুপে সেটা স্প্যাম কর এক ক্লিকে। এক-দুজনের ভাল লাগতে পারে, তারা বাহবা করে। যাদের ভাল লাগে না, তারা চুপ থাকে। খারাপ কথা শুনব ভেবে তো লেখা কেউ পাঠায় না বন্ধুদের। বন্ধুদের কাজই হল সব ব্যাপারে হাততালি দেয়া। যা কিছু গালি দেয়ার, সেটা ব্যাক্তিগত ভাবে দ...

হাবিজাবি

লিখিত শব্দ আসলে একটি শক্তির রূপ। এক একটি শব্দ এক একটি বিশেষ শক্তির প্রতিরূপ। তাই শব্দ চয়ন সঠিক হওয়া দরকার। নয়ত শক্তিগুলি পুঞ্জিভূত হবে না, তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়বে এদিক ওদিক।  সেখানেই কবিদের কৃতিত্ব। কবিদের থেকে আর কেউ ভাল জানে না এক একটি শব্দের অভিনিহিত ক্ষমতা। গদ্য লেখকদের সে ক্ষমতা অনেকটাই কম, তবু, সাধারণ মানুষের থেকে অবশ্যই বেশি। তাই গদ্য লেখকদের অনেক মেহনত করে যেটা লিখতে হয়, কবিরা সেটা একটি বা দুটি ছোটো ছত্রে বুঝিয়ে দিতে পারে খুব সহজেই।  লেখালেখি আসলে নিজের সাথে কথা বলা। তাই সেটা নিজের ভাষাতে হওয়াই কামনিয়। অন্যের ভাষা ধার করে বিখ্যাত হওয়া যায় হয়ত, ঠিক নিজের সাথে কথা বলা যায় না।  আমার বাংলা চর্চা করা হয়নি তেমনভাবে বহুকাল। লেখালেখির চর্চাও একরকম ঘুচেই গেছে অর্থনীতিক সাংবাদিকতা করে। তেমন কিছু বলারও নেই। আমি নিজের জীবনে যা দেখেছি তার বেশি কল্পনা করতে পারি না। এককালে পারতাম, কিন্তু এখন অনেকটাই ভোঁতা হয়ে গেছি। তাই ভাবছি খালি নিজের জীবনের কথাই লিখব। একটা বই লিখেছি, কিন্তু সেটা আগাপাশতলা রিরাইট করতে হবে। সে অনেক হাঙ্গামা। কুঁড়েমি তো আছেই। তাছাড়া আছে "impostor syndrome"।...

লিখি, কেন লিখি

আজকে অনেকদিন পরে একটি মানুষের নাম শুনলাম যার সাথে আমার দেখা আমার একক যাত্রার একেবারে প্রথম পর্বে। কে জানি কেন আজকাল দেখি পুরনো লোকেরা সব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাজির হচ্ছে। যেন এটি একটি চক্র ছিল। আমি আমার চক্রের অন্তিম বিন্দুতে এসে আবার প্রথমে ফিরে গেছি। হিশেব করে দেখতে গেলে সেই বিন্দু থেকে এখন পর্যন্ত সময় ষোল বছর। আমার এখন মনে হচ্ছে আর বছর পনের অব্ধি আমি আছি এখানে, তারপর বোধয় প্যাক-আপ। অসুবিধে নেই। পনের বছরে আমার বয়স হবে সাতান্ন ছুঁই ছুঁই। আমার বাচ্চাটা বড় হয়ে যাবে ততদিনে, যদিও মাত্র বাইশ হবে তখন তার বয়স। তবুও, বাইশ একটি নারীর পক্ষে যথেষ্টই। অবশ্য এখনকার মেয়েরা তো ঠিক বড় হয় না মা হওয়ার পরেও। ছেলেরাও এখন আর বাড়ছে না। অথচ ছোটো থাকতে কি গুরুগম্ভীরই না হয় মানুষ। অদ্ভুত সময়, ছোটোরা বড় হতে চায়, বড়রা কিছুতেই বাড়বে না। ভাগ্যিস আমার এই লেখাগুলি গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া বিশেষ কেউ পড়বে না। এখন কি বলছ, লিখছ, এমনকি ভাবছ,  তার ওপরেও খবরদারি করার লোক প্রচুর। কোথাও কিছু নেই, কোনও উটকো ছোকরা দেখলে সোশ্যাল মিডিয়াতে এসে অযথা গালি মেরে গেল। কি দরকার বাবা লেখালেখি চোদ্দটা লোককে দেখিয়ে নাম কামাবার লোভ করার? এমনিতেই...

অবাক পৃথিবী (1B)

মা ঘরে নিয়ে গিয়ে পিকলুকে একটা ফানেলের জামা আর হাফ হাত সোয়েটার পরিয়ে দিল। মা কে আজ একদম ভালো লাগছে না, কিন্তু সেটা বোঝাবার সাহস নেই।  দিদিকে দলে পাওয়া যাবে না এসব ব্যাপারে।  লড়াইটা তার একার।    পিকলু আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। অনেক মানুষই ক্ষুদিরামদের বাড়ির কোণে হারিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে নাক বরাবর গেলে বিলুদাদের ঘর। একটু এগিয়ে ঢাল বেয়ে নামলেই খাল।  বারান্দা থেকে দেখা যাচ্ছে সামনের শিবমন্দিরের চাতালে কয়েকজন বন্ধু বসে।  একবার ডেকে কথা বলতে ইচ্ছে করল, কিন্তু মা নিশ্চয় খুশি হবে না তাতে।  ক্ষুদিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না,  সে নিশ্চয় ভোর থেকেই খালপাড়ে। পিকলুর বন্ধুদের যেখানে খুশি যেতে কোনো বাধা নেই, কেবল তার বেলাতেই সীমানা নির্দিষ্ট করে দেয়া। পিকলুর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে দুঃখে।  সে আজকে লুচি খাবে না। অংকের খাতায় কাটাকুটি খেলবে, ইস্কুলের বই মিকি মাউসের স্টিকার লাগিয়ে নষ্ট করে দেবে। মা চেষ্টা করেও তাকে বর্ণপরিচয় থেকে কঠিন বানান লেখাতে পারবে না। বাবা হাতের লেখা দিলে খুব তাড়াতাড়ি লিখে পাতা ভরিয়ে ফেলবে আজ।  পিকলু মাথা গোঁজ করে ঠাকুমাদের ঘরের দিকে...

অবাক পৃথিবী 1st chapter (1A)

অবাক পৃথিবী  ঘুম ভেঙে গেছে, অথচ বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না।  আজ রবিবার। ইচ্ছে করলেই সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়া যায়, কেউ কিচ্ছু বলবে না।  বড়জোর মা ঘরের পর্দাগুলো সরিয়ে আলো করে দেবে চতুর্দিক।  তা করুক, লেপের মধ্যে কায়দা করে মাথাটা ঢুকিয়ে শ্বাস নেয়ার মত একটা ফাঁক রাখলেই হবে।  শীতের সকালে লেপের এই ওম ত্যাগ করার মত মূর্খামি আর হয় না।   ঘুমটা পুরোপুরি ভাঙার আগে থেকেই পিকলুর কানে ভেসে আসছে অনেক মানুষের দ্রুত চলার শব্দ।  লোকেরা ছোট ছোট দল বানিয়ে হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছে কোথাও। যেন কোনো রাজামশাই তাদের খুব জরুরি একটা কাজে তলব দিয়েছে। তাড়াতাড়ি না এলেই ঘচাৎ করে মুন্ডু উড়ে যাবে। তারা উত্তেজিত ভাবে অনেক কথা একসাথে বলার চেষ্টা করছে।  বিষয়বস্তু বুঝে উঠতে পারেনি এখনো পিকলু, শব্দগুলো তার ঠিক চেনা ঠেকছে না কানে।    তাদের এক কামরার ঘরটা একেবারেই রাস্তার গা ঘেঁষা। পিকলু জানালার দিকে মাথা রেখে শোয়।  জানালা বন্ধ থাকলেও রাস্তার লোকেদের কথা শোনা যায়। ঠাকুমা ছাড়া আর কাউকে রহস্যটা ফাঁস করেনি এখনো সে, তাদের জানালাটা আসলে একটা রেডিও।  কান পেতে থাকলে...

বাপিদা

  আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না। বাপিদাও চলে গেলো। আমায় অকৃত্তিম ভালোবাসতো বাপিদা, সেই ছোট্টবেলা থেকে আমায় নিয়ে তার গর্ব, অথচ আমি নিজেও জানতাম না গর্ব করার মত এমন কি করলাম? মাধ্যমিক পরীক্ষাটাও তো দিই নি তখনো, আমাকে এতো কেন ভালোবাসে মানুষটা? কিছুতেই বুঝি নি। আর বোঝার অবকাশ রইলো না। পাড়ার অনুষ্ঠানে নাটক করতে হবে। বাপিদা বললো একটা নাটক লিখে ফেল, ডিরেকশন দিয়ে দে। বাপিদা নিজের হাতে সবাইকে মেকআপ করিয়ে দিলো, ছুটে ছুটে নাটকের সব জিনিসপত্র জোগাড় করে দিল। ক্লাবের বড়োদের বলে দিল সবরকম ভাবে সাহায্য করে দিতে। শুরু হলো আমার গ্রুপ "প্রয়াস" । একনিষ্ঠ বামকর্মী ছিল বাপিদা। এই তো সেদিন, সেপ্টেম্বর নাগাদ বোধয়, বামেদের সমালোচনা করে একটা ছোট্ট লেখা লিখলাম। বাপিদা ভূয়সী প্রশংসা করলো, বললো বেশ করেছিস লিখেছিস। তোর যেটা ঠিক লেগেছে সেটা লিখেছিস। আমি মানতে নাও পারি, কিন্তু তোর লেখাটা বেড়ে হয়েছে। এবার বাড়ি গিয়ে বাপিদার অফিস ঘরের খোলা দরজাটা পেরোতে পারবো তো? কোন্নগর গিয়ে বাপিদাকে আগে হাজিরা দিয়ে আসতাম। ফেরার সময় "আসছি বাপিদা, কাল ভোরবেলা ফ্লাইট" বলে আসতাম। বাপিদা হেসে বলতো, "বাবু, আর ফিরবি না এখা...

চোখ মুছে ফেলো

চারিদিকে মৃত্যুমিছিল দেখে হাফিয়ে উঠেছি, এখন আর ভয় করে না, শুধু ক্লান্তি জাগে মনে সারি সারি মৃতদেহ পাশাপাশি শুয়ে চিতায় একসাথে আগুন, সিঁকে বেঁধা মাংসের মত প্রধান মন্ত্রী, গৃহ মন্ত্রী, মুখ্য মন্ত্রী সোল্লাসে সভা করে বাম মেলায় হাত চরম ধার্মিকের সাথে হা হাহা হাসিটাই ঝুলে থাকে হাওয়ায় শেষমেশ চারিদিকে মৃত্যুমিছিল, কান্নার অবসান হয়েছে সে কবে © ঘেঁটুফুল