আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
বাপিদাও চলে গেলো।আমায় অকৃত্তিম ভালোবাসতো বাপিদা, সেই ছোট্টবেলা থেকে আমায় নিয়ে তার গর্ব, অথচ আমি নিজেও জানতাম না গর্ব করার মত এমন কি করলাম? মাধ্যমিক পরীক্ষাটাও তো দিই নি তখনো, আমাকে এতো কেন ভালোবাসে মানুষটা? কিছুতেই বুঝি নি। আর বোঝার অবকাশ রইলো না।
পাড়ার অনুষ্ঠানে নাটক করতে হবে। বাপিদা বললো একটা নাটক লিখে ফেল, ডিরেকশন দিয়ে দে। বাপিদা নিজের হাতে সবাইকে মেকআপ করিয়ে দিলো, ছুটে ছুটে নাটকের সব জিনিসপত্র জোগাড় করে দিল। ক্লাবের বড়োদের বলে দিল সবরকম ভাবে সাহায্য করে দিতে। শুরু হলো আমার গ্রুপ "প্রয়াস" ।
একনিষ্ঠ বামকর্মী ছিল বাপিদা। এই তো সেদিন, সেপ্টেম্বর নাগাদ বোধয়, বামেদের সমালোচনা করে একটা ছোট্ট লেখা লিখলাম। বাপিদা ভূয়সী প্রশংসা করলো, বললো বেশ করেছিস লিখেছিস। তোর যেটা ঠিক লেগেছে সেটা লিখেছিস। আমি মানতে নাও পারি, কিন্তু তোর লেখাটা বেড়ে হয়েছে।
এবার বাড়ি গিয়ে বাপিদার অফিস ঘরের খোলা দরজাটা পেরোতে পারবো তো? কোন্নগর গিয়ে বাপিদাকে আগে হাজিরা দিয়ে আসতাম। ফেরার সময় "আসছি বাপিদা, কাল ভোরবেলা ফ্লাইট" বলে আসতাম। বাপিদা হেসে বলতো, "বাবু, আর ফিরবি না এখানে?" আমি কি বলবো ভেবে না পেয়ে প্রতিবারই বলতাম, "এখানে যে আমার তেমন চাকরি নেই বাপিদা।" পরের দিকে বলতাম, "আর ফিরতে ইচ্ছে করে না বাপিদা। অনেকদিন হয়ে গেলো। পিছুটান কেটে গেছে অনেকটাই। বাবা মা আছে বলে ..." বাপিদা আবার হেসে বলতো, "আর আমাদের? আমাদের প্রতি কোন দায় নেই তোর?"
আমাকে এ প্রশ্ন আর কেউ কোনোদিন করবে না। প্রশ্ন না থাকলে সঠিক উত্তর দেয়ার প্রচেষ্টাও করতে হয় না। আমার দায় বুঝি খুব সহজেই মিটে গেলো।
কিন্তু আমি যে চরম স্বার্থপর, আমাকে ভালোবাসার লোকেরা এভাবে অকালে চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো? মুম্বাই বা কি আর কোন্নগর কি? বাপিদা তোমায় আর দেখতে পাবো না এইটা ভেবেই যে আমার বুক চীরে যাচ্ছে কষ্টে। আমি যে কাঁদতেও পারছি না আর।
মন্তব্যসমূহ