সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অবাক পৃথিবী 1st chapter (1A)

অবাক পৃথিবী 

ঘুম ভেঙে গেছে, অথচ বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না।  আজ রবিবার। ইচ্ছে করলেই সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়া যায়, কেউ কিচ্ছু বলবে না।  বড়জোর মা ঘরের পর্দাগুলো সরিয়ে আলো করে দেবে চতুর্দিক।  তা করুক, লেপের মধ্যে কায়দা করে মাথাটা ঢুকিয়ে শ্বাস নেয়ার মত একটা ফাঁক রাখলেই হবে।  শীতের সকালে লেপের এই ওম ত্যাগ করার মত মূর্খামি আর হয় না।
 
ঘুমটা পুরোপুরি ভাঙার আগে থেকেই পিকলুর কানে ভেসে আসছে অনেক মানুষের দ্রুত চলার শব্দ।  লোকেরা ছোট ছোট দল বানিয়ে হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছে কোথাও। যেন কোনো রাজামশাই তাদের খুব জরুরি একটা কাজে তলব দিয়েছে। তাড়াতাড়ি না এলেই ঘচাৎ করে মুন্ডু উড়ে যাবে। তারা উত্তেজিত ভাবে অনেক কথা একসাথে বলার চেষ্টা করছে।  বিষয়বস্তু বুঝে উঠতে পারেনি এখনো পিকলু, শব্দগুলো তার ঠিক চেনা ঠেকছে না কানে।
  
তাদের এক কামরার ঘরটা একেবারেই রাস্তার গা ঘেঁষা। পিকলু জানালার দিকে মাথা রেখে শোয়।  জানালা বন্ধ থাকলেও রাস্তার লোকেদের কথা শোনা যায়। ঠাকুমা ছাড়া আর কাউকে রহস্যটা ফাঁস করেনি এখনো সে, তাদের জানালাটা আসলে একটা রেডিও।  কান পেতে থাকলে নানান শব্দ শোনা যায় -- তেল মেখে চোরেদের পা টিপে চলার শব্দ, নারকেল গাছের মাথার ওপর কচি বাচ্চার কান্না, বাঘেদের গাছের গুঁড়িতে নখ শান দেয়া, কুকুরের দলের অতর্কিত ঘেউ শুনে
শিয়ালদের সড়াৎ করে কচু বনে ঢুকে পড়া।  পিকলুর গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে শব্দগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পায় বাইরের দৃশ্য। আবার এক ঘেঁয়ে লাগলে একটা নব ঘোরালেই মানুষের কথা ভেসে আসে কানে।    

মাথাটা একটু পরিষ্কার হচ্ছে। হালকা সবুজ দেয়ালগুলো, ঘরের ভেতর নরম অন্ধকার, নীল ফুল আঁকা সাদা বিছানার চাদর, পর্দার ফাঁক থেকে ফিতের মত পাতলা আলো, এসবি তার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তি। 
পাশে দিদি মুখ হা করে অঘোরে শুয়ে, তার বালিশ ভীজে গেছে লালে।  

গতকাল রাতের কথা মনে পড়ছে অল্পস্বল্প। পিকলুর দ্বারা জীবনে বিশেষ কিছু হবে না, সেটা ঘুমাবার আগে ঘোষণা করেছিল দিদি। শনিবার-রবিবার বাড়িতে অনেক লোক আসে বলে এই দুদিন পিকলুর পড়ার দায়িত্ত্বটা মা দিদিকে দিয়ে দিয়েছে। দিদি স্কুলে ফার্স্ট হয়, পিকলুকে তাই বোধয় ফেল করাতে লজ্জা পায় টিচাররা। পিকলু পড়া না পারলে টিচাররা পিঙ্কিকেই অনুযোগ করে। নিজে ভালো রেজাল্ট করলেও তাই পিঙ্কি সেটা উপভোগ করতে পারে না আর সব ফার্স্ট গার্লদের মত।
পিকলু মায়ের ভয়ে বই খুলে বসলেও, দিদিকে পাত্তা দেবার বিশেষ কারণ নেই।   ক্লাস ফোর এ পড়ে দিদিপরের বছরই দিদি বড়দের স্কুলে চলে গিয়ে একেবারে বড় হয়ে যাবে। দুই ক্লাস নিচে থাকা ভাইকে নিয়ে দিদির ভারী দুশ্চিন্তা।     
দিদির কথা মত চললে পিকলুকে খেলাধুলো সব ছেড়ে শুধু বই খুলে বসে থাকতে হয় সারাদিন। সেটা সম্ভব নয়। বরং দিদিকেই নিজের জীবনের অনেক কিছু বদলে নিতে হয় মায়ের কাছে সপ্তাহশেষের শিক্ষিকা সাজার হিসাব বোঝাতে গিয়ে।  পিকলুর অঙ্কের খাতা টেনে দিদি নিজেই উত্তরটা বলে দেয় শেষের দিকে, পিকলু পরমানন্দে সেটা লিখে ফেলে। ব্যাপারটা মন্দ হত না, যদি না তার বদলে পিকলুকে পড়াশোনা নিয়ে প্রচুর কথা শুনতে হত পরে। টিচাররা কিছু বললে পিকলুর গায়ে লাগে না একদমই। কিন্তু দিদির কথায় গুরুত্ব না দিলে দিদি খুব দুঃখ পায়। পিকলু কাউকে দুঃখ দিতে চায় না।

দিদি ক্লাসে ফার্স্ট হয় আর এক গাদা বই পায় প্রতি বছর।  গল্প পড়ে সময় নষ্ট করার মেয়ে সে নয়, তাই সেগুলো পিকলুর হাতে উঠে আসে মোড়ক খোলার সাথেই।  পিকলুর হাতে অবশ্য প্রচুর সময়।  খবর কাগজে ছোটদের পাতার সবটুকু সে বানান করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।  ছোটদের ম্যাগাজিন হাতে পেলে সে ঝাঁপিয়ে ধারাবাহিক গুলো আগে পড়ে ফেলে।  মাঝখানের কোনো সংখ্যা জোগাড় না হলে কল্পনার আশ্রয় নিয়ে সে অনায়াসে মিলিয়ে নেয় নতুন সংখ্যার ঘটনার সাথে।  কমিকস বইয়ের জন্য পিকলু যুদ্ধেও যেতে পারে।  দিদির পুরস্কারের বইগুলি গোগ্রাসে গিলে পরম স্বর্গসুখ লাভ হয় তার।
   
শুধু পড়ার বইয়ের মধ্যেই বুঝি লুকিয়ে থাকে ঘুমপরীরা। পাতাগুলো খুললেই তারা হাওয়ায় ভেসে চোখে অদৃশ্য কিছু ছুঁড়ে মারে।  চোখ ভারী হয়ে আসে নিজের অজান্তে। কাল রাতেও তাই হয়েছিল।  এখন চোখ খুলে দেখছে তার নিজের ঘুমাবার জায়গাতেই সে শুয়ে।  গায়ের সোয়েটারটাই বা কখন খোলা হল , আর লেপ মুড়ি দিয়ে কখন শোয়ানো হল, তার কিছুই মনে পড়ছে না। পিকলু জানে তার বাবাই এসব করে, দিদির বেলায় দেখেছে।  শুধু নিজের সময় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় সেই ঘুমপরীদেরই একজন নিশ্চয় তাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে শুইয়ে দেয় বন্ধ জানালার পাশে।  

এখন মাথাটা বেশ পরিষ্কার হয়ে গেছে।  বাইরেটা খুব ঠান্ডা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু শুয়েও থাকতে ইচ্ছে করছে না আর। উঠে পড়া উচিত কিনা সে ব্যাপারে পিকলুর মনে হালকা এক দ্বন্দ্ব চলছে।  ঘরটায়  ভরে গেছে লুচি ভাজার গন্ধ।   দাঁত মেজে এলেই মা থালায় সাজিয়ে দেবে তিনটে গরম সাদা তুলোর মত লুচি। সঙ্গে আধ বাটি ঝোলা গুড়।  আজ বাবার ছুটি, সবার ছুটি। শুধু মা আজ সারাদিন দৌড়ে অন্যদিনের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করবে। 

আজকে দুপুরে একটা ক্রিকেট ম্যাচ আছে সফেদার মাঠে। পিকলু একেবারে ছোট বলে তাকে ম্যাচের জন্য টিমে নেয়া হয় না এখনো, কিন্তু প্রতিটি ম্যাচে তার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  ক্রিকেট খেলার সময় সে রানের হিসাব রাখে। তার জন্য বিশেষ কতগুলি দক্ষতা লাগে।  চাপে পড়লে নিজেদের রানে জল মেশাতে জানতে হয়, এবং প্রতিপক্ষ যেন জল মেশাতে না পারে, সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখতে হয়। মাঠে না নেমেও পিকলু চেষ্টা করে তার দলের হয়ে চার পাঁচ রান অন্ততঃ করে দিতে। ওদিকে পাঁচ ছয় রান বাঁচাতে পারলে, বা কমিয়ে আনতে পারলে, টিমের জন্য তার অবদান সম্পূর্ণ হয়। কাজটা সে খুব মন দিয়ে করে বলে ক্যাপ্টেন ক্ষুদিরাম তাকে খুব ভালোবাসে।  

ফুটবলের সময় তার কাজ হল অন্য বন্ধুদের সাথে নিজেদের গোলপোস্টের বক্স ঘিরে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষেকে ভেবলে দেয়া। বল নিয়ে নিজেদের গোলের বাক্সে ঢুকলেই হ্যান্ডবল হ্যান্ডবল চিৎকারে বিভ্রান্ত করে দিতে হয় স্ট্রাইকারকে।  অফসাইড বলে একটা ব্যাপার শুনেছে সবাই, কিন্তু ব্যাপারটা কি তা কারোরই ঠিক জানা নেই। তাই খুব গুরুত্ব নিয়ে অফসাইড দাবি করলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে দেয় মাঝে মধ্যে। পিকলুরা এভাবে এক দুবার নির্ঘাত গোল বাঁচিয়েছে।
এছাড়া  মাঠের বাইরে থেকে গলা ছেড়ে চিল্লাতে হয় টিমের জন্য। সেটা তো সবসময় আছেই।  

পিকলুর ক্রিকেটের থেকে ফুটবলটাই ভালো লাগে বেশি।  কিন্তু শীতকালে ফুটবল খেলা যায় না।  পায়ে পায়ে লাগলে আলু হয়ে যায় খুব সহজেই। সারতে অনেক সময় লাগে। 

পিকলুর একবার টুক করে বারান্দা থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছে করল, কিন্তু লেপ ঠেলে বেরোনো সম্ভব নয়। লেপের ভেতরটায় যখন গরম লাগতে শুরু করবে, সে ঠিক প্রজাপতির মত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। সোম থেকে শুক্র মা জোর করে তুলে দেয় বাইরে অন্ধকার থাকতেই। ভোরবেলা স্কুলের ভ্যান তাদের নিতে আসে।  তাই শনি-রবিবার যখন খুশি ওঠার ছাড়।  শুধু শনিবার দশটা থেকে আঁকার ক্লাস।  অবশ্য তার অনেক আগেই নিজের থেকে উঠে পরে পিকলু।  

বাইরে মানুষদের গলার আওয়াজটা এখন  বেশ স্পষ্ট।  কিছু একটা হয়েছে নির্ঘাত। উঠবো উঠবো ভাবছে, মনে হল গেটের বাইরে পুতুলদির গলা।  "বৌদি, ও বৌদি", পুতুলদি ডাকছে। পুতুলদির গলাটা অন্যদিনের মত নয়। খুব উত্তেজিত শোনাচ্ছে তাকে।  

মাকে খুন্তি হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরোতে দেখে পিকলু এক ঝটকায় লেপটা গা থেকে সরিয়ে দিল।  ব্যাপারটা একবার সরেজমিনে তদন্ত না করলেই নয়।

মায়ের লেজুড় হয়ে সেও হাজির হয়ে গেলো বারান্দায়। পুতুলদি বাইরের গেট খুলে বারান্দার দিকে এগিয়ে আসছে দ্রুত। 

বিছানা থেকে উঠে আসার সময় পিকলুর হাফ সোয়েটারটা গায়ে দেয়া হয়নি।  মা তার মুখের দিকে বিরক্তিভরা চোখে তাকালো।  মানে, এক্ষুনি সোয়েটারটা পরে আসতে হবে, নয়তো রক্ষা নেই।  পিকলু দুহাত আড়াআড়ি করে বুক চেপে দাঁড়িয়ে থাকলো, সোয়েটার পড়ার সময় নেই এখন।    

পুতুলদির চোখগুলো এমনিতেই একটু বড় বড়, এখন রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে। কৈ , পুতুলদির হাতে ফ্যান নেবার বালতিটা নেই তো।  অবশ্য এত সকালে সে আসেও না কোনোদিন। সবার বাড়িতে ভাতটাই তো রান্না হয় বেলার দিকে।  

বারান্দা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই পুতুলদি মাকে কি একটা বলে।  মা সাথে সাথে গালে হাত ঠেকায় , অন্য হাতে খুন্তিটা জোরে মুষ্টিবদ্ধ। এ: আসল মজাটা ফস্কে গেল মনে হচ্ছে।

চোখ রাঙানি খেয়ে মায়ের পাশে হাঁটার সাহস পায়নি পিকলু, কিন্তু এখন আর সেসব পরোয়া করলে চলবে না। পিকলু মায়ের গা ঘেঁষে আসে।

"বলিস কি রে পুতুল! বাস উল্টে গেছে!"
"তাইলে আর বলছি কি বৌদি!, বিলুদের খালে বাসটা পড়ে উল্টে যাবেনি গো। পুরোটা জলের তলায় ঢুকে গেছে। জোয়ার ছেল গঙ্গায়, খালে জল বেড়েছিল অনেক।"
পিকলু উত্তেজনায় টানটান হয়ে উঠলো। এরকম যে কিছু একটা ঘটা সম্ভব সেটা সে কল্পনাই করতে পারে নি কোনোদিন। বাস আবার খালে পরে যায় নাকি, তাও পড়ে আবার উল্টে যায়? উল্টো বাস কেমন লাগে মনে মনে সেটার ঝট করে একটা কল্পনা করে নেয় সে।   
"কত লোক ছিল বৌদি। আমি দেখতে যাচ্ছি, যাবে?"
মা কিছু বলার আগেই পিকলু আমি আমি করে উঠলো। 
"চোপ!" মায়ের ক্রূদ্ধ চোখে পিকলু কুঁকড়ে গেলো। "না রে পুতুল, ওসব আমার সহ্য হবে না। তুই যা। আমি তোর থেকে জেনে নেবো। "
"আমিও পুতুলদির সাথে যাবো মা?"
পিকলুর মৃদু আর্তি মা আবার রক্তচক্ষু মেলে ভষ্মীভুত করে দিল।

পিকলুর এখন খুব শীত করছে। হঠাৎ করে মনে হলো এত ঠান্ডা সে জীবনে কোনদিন অনুভব করে নি। নিচের ঠোটটা ফুলে কেঁপে কেঁপে উঠলো।

পুতুলদির পেছন দিকে মাঠের ওপর ঝুলে আছে সাদা মেঘের মতো কুয়াশা।  স্বরুপদাদের দালানটা একেবারেই গায়েব হয়ে গেছে, শুধু রান্নাঘরের লাল ভিজে টালিগুলো এদিক ওদিক থেকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।  মাঠের পাশে পুকুরের পাড় বোঝা যায় অল্পবিস্তর।  জলের মধ্যে একটা হালকা পাপড়ের মত আস্তরণ পড়েছে ঠান্ডার। পিকলু লক্ষ্য করেছে গরমকালে পুকুরটার জল টলটল করে, শীতকালে পুকুরটারও ঘুম ভাঙতে দেরি হয়। অথচ এই ঠান্ডার মধ্যেও ছোট বড় পাখির দল ব্যস্ত। একটা ছোট সাদা-কালো পাখি ব্যস্ত স্বরে সবারির কাজের তত্ত্বাবধান করতে থাকে এদিক থেকে ওদিক হেঁটে ফিরে। ডাকের সাথে তাল মিলিয়ে মাস্টারমশাইয়ের ছড়ির মত তার লেজ নাচতে থাকে হাওয়ায়। কিন্তু যা চোখে দেখা যায়, সবসময় তা সত্যি না। ঠাকুমা তাকে জানিয়েছে পাখিটার নাম খঞ্জনা, “সকালে উঠিয়া খঞ্জনা, করে ঠাকুরের ভঞ্জনা।” 

খঞ্জনা নামটা খুব ভালো লাগে পিকলুর।
Copyright: ghetufool

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তোমাদের জন্য মেমসাহেব, সাহেব।

ইংরেজিতে লিখব না বাংলা? এই ভাবতে ভাবতেই আমার সময় কেটে গেল, লেখা আর হয়ে উঠল না। কোন কিছু শুরু করার আগে উদ্দেশ্যটা ঠিক হওয়া জরুরি। আমার প্রস্তুতি ঠিক ছিল না।  এখন ভাবছি লেখাটা জরুরি, ভাষাটা নয়। আমি যেহেতু দুটো ভাষা জানি, আমি দুটোতেই লিখব। যেটা বাংলায় লিখলে ভাল হয়, সেটা বাংলায় লিখব, যেটা ইংরেজিতে স্বাভাবিক, সেটা ইংরেজিতে লিখব। বাংলায় লিখতে পারলে সব থেকে ভাল হয়, সেটাই আমার মাতৃভাষা, কিন্তু ইংরেজি সহজতর। সেটা হয়ত আমার দুই দশকের ইংরেজি লিখে কাজ করার ফল।  আমি দুটি ভাষাতেই সাহিত্যমানের লেখা লিখতে পারব না। কিন্তু লিখতে ভালবাসি। সব  শেষে একটি ইবুক বানিয়ে আমাজনে বা গুগুলে ছেড়ে দেবো। সেটা অবশ্য এই চাকরিটা ছাড়ার পরেই সম্ভব। যখন সময় আসবে, তখন আমার লেখাগুলি এই বিশাল আন্তরজালে ঠাই পাবে। তার আগে লেখাগুলি তৈরি করা দরকার। কেউ পড়বে না হয়ত, কিন্তু আমার কন্যা শ্রাবস্তি আর ভাগ্নে প্রভেক পড়লেই যথেষ্ট। আমি যখন থাকব না, এই লেখাগুলি হয়ত ওদের একটু শান্তি দেবে। অমরত্বের ইচ্ছে আমার নেই, তবে সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে কথা বলতে পারার লোভ সংবরণ করা কঠিন।  হয়ত এই হাবিজাবি লেখাগুলি ভবিষ্যতের প্রজন্মের কেউ পড়ব...

বাংলা ও বাঙালি

বাংলায় লিখবো কি লিখবো না, পারব কিনা, এসব ভাবতে ভাবতে ইংরেজিতে লেখা শুরু করলাম। তখনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল।  শ্রী নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী মহাশয়ের ইউটিউব চ্যানেলে বাঙালি ও বাংলা ভাষার সংকট নিয়ে একটি লেকচার শুনলাম। কত মানুষের সাধনা ও সংগ্রামের ফল আমাদের এই বাংলা ভাষা। আমার মনে একটি দ্বন্দ্ব চলে আসছিল, আমার ভাষা বোধকরি সাহিত্য-উপযোগী নয়। তাহলে সাহিত্য সৃষ্টি করব কী করে। ওনার বক্তৃতা শুনে বুঝলাম এটি আমার মনের অযথা বাধা, এতে কোনও সার নেই। এই স্বরোপিত বাধা শুধু মায়ার খেলা। কত মানুষের কত রকম বাংলা। আজ যে ভাষায় লিখছি বা কথা বলছি, সেটিই কি খাঁটি? আমি যে ভাষায় লিখব সেটিই আমার ভাষা। এত ভাববার কি আছে। তাই, আমার জানা ভাষাতেই আমি আমার মতো করে সাহিত্য রচনা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সবটাই হাতে লিখবো আগে। পরে টাইপ করে নেওয়া যাবে, যেমন এখন করছি। আর হ্যাঁ, নিজের ভাষায় লিখছি, নিজের সাথে কথা বলার মতো করেই। সেখানে তাড়াহুড়ো চলবে না। যখন ইচ্ছে হবে লিখব, ইচ্ছে না হলে লিখব না। তবে লেখা থামাবো না। লেখটা শুরু করেছিলাম একটি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে বলে। সেটায় আসা  যাক। ভাদুড়ী মশাই তার...

হাবিজাবি ১

আমার এ লেখা কারোর উদ্দেশ্যে নয়, মহান সাহিত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টাও নয়, বাজে বইয়ের ভূমিকাও নয়। আমার এ লেখা শুধুমাত্র আমার জন্য। ছোটবেলায় যে পৃথিবীটাকে পেছনে ফেলে এসেছি, তাকে ছুঁয়ে দেখার প্রচেষ্টা মাত্র। আমার পৃথিবী সবুজ ছিল। কচি পাতার সবুজ, পায়ের নরম সবুজ, পুকুরের ঘন সবুজ।  সেই সবুজ এখন আর দেখতে পাই না। হয়ত এখনও সেরকমই সবুজ পৃথিবী, শুধু আমি বুঝি দেখার চোখ হারিয়েছি, মনের সবুজ কালো হয়ে গেছে। সেই কালো ঘষে  মেজে আবার সবুজ করা যায় না? দেখি চেষ্টা করে।  বাংলা ভাষায় লিখতে গেলে, যেকোনো ভাষাতেই লিখতে গেলে, সেটা  ভালো করে জানতে হয়। সেই ভাষায় অনেক পড়াশোনা করতে হয়। পড়াশোনা আর করা হয়না আগের মত। তাই ভাষার প্রতি দক্ষতাও হারিয়েছি। কিন্তু আমার কিছু বলার আছে, তা নিজের ভাষায় নিজের মতই বলব। আত্মম্ভিরতার সুযোগ নেই এখানে, আমার জীবনে প্রাপ্তি খুব বেশি নেই, বা হয়ত আছে অন্যদের তুলনায় বেশি, কিন্তু হরে দরে দেখতে গেলে সবি শূন্যের খাতায় সই। ঠিক যেমন আমার প্রথম চাকরিতে খাতায় সই করে পাকানো কাগজে মাস-মাইনে পাওয়া।  বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের সখ। ফারনান্দ পেশোয়ার সখ ছিল লেখা। এখন যত  অন্তর্ম...