সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ছুটি ছুটি ছুটি

আজকে একটা নতুন কথা শিখলাম। ছুটি।

এমন একটা দিন যেদিন দাঁত মেজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়, দিকবিদিক না দেখে, বাড়ির কোনো দায়িত্ব পালন না করে।  যেদিকে দু চোখ যায়, ধেই ধেই নাচা যায়, এমন একটা দিন হলো ছুটি।  সত্যি বলতে কি,  জন্মে শুনিনি এমন কথা।  এখন শুনতে হচ্ছে বৌয়ের কাছে।

আমি রোজ কাজে যাই, অনেক বাইরে বেরোবার জায়গা, প্রচুর বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেলামেশা যায়, আড্ডা ঠাট্টা হয়, ভারী মজা করি, একটু আধটু কাজের নামে প্রহসন করার ফাঁকে।  আরে  ভাই, কাজটাও তো ছুটিরই অঙ্গ।  কিন্তু আমার বৌ বেচারি সারাদিন ঘরের কাজ করে করে, এই জেলখানায় বন্দি থেকে দিনে দিনে মারা যাচ্ছে।  কাজেই তার ছুটি চাই।  রোববার করে তাই সে ঘুম থেকে উঠেই দাঁত মেজে বেরিয়ে পরবে তার ছুটির মজা লুটতে। আমি সেদিন তার ঘরের সব কাজ করে দেব, বিছানা তোলা থেকে রান্না করে বাসন মজা সব।  একদিন নাহয় আমায় কাজ করতে হবে, বাকি ছয়দিন তো আমার ছুটি ছুটি ছুটি।  কি মজা না!

বিয়ে করলে কত কিছুই না জানা যায়।  সাধে কি আর মুনী ঋষিরা বলে গেছেন, নিজেকে যদি তিস মার্ খান ভেবে থাকো, তাহলে বৌয়ের ফিডব্যাক টা নাও।  ফিডব্যাক না চাইতেই  আসে, মুহুর্মুহু আসে, আসতেই  থাকে, কিছুতেই থামানো যায় না।  সকালের ব্র্যাকফাস্টটা ঠিকমতো ফিড না করে  ফিডব্যাকের  ভয়ে কত পুরুষ সকাল সকাল বাজারের থলে হাতে নিয়ে বাজারে ধা হয়ে যায়।  যতক্ষণ না বাজারের থলে উব্ছে দু তিনটে ডিম্ ভাঙা মুরগির বাচ্চা রাস্তায় লাফিয়ে পড়ছে, ততক্ষন তারা বাজার করেন।

বাজারের ব্যাগ চাগিয়ে হয়তো হাত ছিড়ে  গেলো, জুতোর দোকানে গিয়ে সেই হাত সেলাই করে তারা আবার বাজার করেন।  জান গেলে অসুবিধে তো কিছু  নেই, মরেও বেঁচে যাবার একটা স্কোপ থাকে, কিন্তু ফিডব্যাক ... ওরে  বাবারে! বাজার থেকে ফেরা হয় সেই সান্ধ্যক্ষণে, যখন বাড়ি থেকে রওনা হলে অফিসে পৌঁছতে একটু দেরি হবে, কিন্তু ছুটি কাটা যাবে না।

তারপর তড়িঘড়ি করে মুখে কিছু গুঁজে তারা দৌড়োয় অফিসে দেঁতো বসের গালি খাবার জন্য।  ফিডব্যাকের সামনে সে সবকে মনে হয় প্রথম প্রেমের ফিসফিস করা সুইট নাথিংস।

বিয়ের আগে জানতুম না আমি যে এতো  অপদার্থ। আমি তো শুধু নই , ভারতবর্ষের সব পুরুষদের যে মেল্ শোভিনিস্ট আচরণ, তার পেছনে আছেন ভারতীয় মায়েরা, যারা যুগে যুগে তাদের ছেলেদের  পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আদর্শ প্রতিনিধি তৈরী করে এসেছেন।  মনে মনে ভাবি, কি ভাগ্গিস তোমার একটি  মেয়ে, ছেলে বড় করার দায়িত্বটা  আর নিতে  হয়নি, হলে জানতে  সব ছেলের মা মনে মনে প্রার্থনা করে তাদের ছেলেটা মেয়ে হলো না  কেন।  জানতে কোনো ছেলে, কোনোদিন, কোনো শালার কথা শোনেনি, এবং তার প্রথম ক্যাসুয়ালটি মা।  মায়ের কেটে দেয়া লক্ষণরেখা ছেলেরা মোটমুটি ১১ বছর বয়সে প্রথম লঙ্ঘন করে, তারপর নো লুকিং ব্যাক।  তাই ছেলের মায়েরা ছেলেদের কেমন হতে হয় সে নিয়ে মুক্ষুর মতো বেশি প্যাক প্যাক করে না।

ছেলেরা যদি প্রথম কারো কথা শুনতে বাদ্ধ হয়, সেটা হলো বিয়ের পর বৌয়ের।  কারণটা এই নয় যে স্বয়ং খনা উবাচ, বরং সুর্পণখার নাক কতক্ষন আর সহ্য করা যায়।  নাক কাটনের ব্যবস্থা যখন নেই, তখন তৎক্ষণাৎ ফোটন বেশি বুদ্ধিমানের পরিচায়ক।  সারা দিন কাজ করে (মানে বাইরে প্রচুর ফুর্তি করে) ঘরে একটু ঘুমুতে আসি বাপু, ঝামেলা করো না কানের গোড়ায়। 

তার থেকে বরং তোমার ছুটি হোক সপ্তাহে একদিন।  আসলে সেটাই আমার আসল ছুটি। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তোমাদের জন্য মেমসাহেব, সাহেব।

ইংরেজিতে লিখব না বাংলা? এই ভাবতে ভাবতেই আমার সময় কেটে গেল, লেখা আর হয়ে উঠল না। কোন কিছু শুরু করার আগে উদ্দেশ্যটা ঠিক হওয়া জরুরি। আমার প্রস্তুতি ঠিক ছিল না।  এখন ভাবছি লেখাটা জরুরি, ভাষাটা নয়। আমি যেহেতু দুটো ভাষা জানি, আমি দুটোতেই লিখব। যেটা বাংলায় লিখলে ভাল হয়, সেটা বাংলায় লিখব, যেটা ইংরেজিতে স্বাভাবিক, সেটা ইংরেজিতে লিখব। বাংলায় লিখতে পারলে সব থেকে ভাল হয়, সেটাই আমার মাতৃভাষা, কিন্তু ইংরেজি সহজতর। সেটা হয়ত আমার দুই দশকের ইংরেজি লিখে কাজ করার ফল।  আমি দুটি ভাষাতেই সাহিত্যমানের লেখা লিখতে পারব না। কিন্তু লিখতে ভালবাসি। সব  শেষে একটি ইবুক বানিয়ে আমাজনে বা গুগুলে ছেড়ে দেবো। সেটা অবশ্য এই চাকরিটা ছাড়ার পরেই সম্ভব। যখন সময় আসবে, তখন আমার লেখাগুলি এই বিশাল আন্তরজালে ঠাই পাবে। তার আগে লেখাগুলি তৈরি করা দরকার। কেউ পড়বে না হয়ত, কিন্তু আমার কন্যা শ্রাবস্তি আর ভাগ্নে প্রভেক পড়লেই যথেষ্ট। আমি যখন থাকব না, এই লেখাগুলি হয়ত ওদের একটু শান্তি দেবে। অমরত্বের ইচ্ছে আমার নেই, তবে সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে কথা বলতে পারার লোভ সংবরণ করা কঠিন।  হয়ত এই হাবিজাবি লেখাগুলি ভবিষ্যতের প্রজন্মের কেউ পড়ব...

বাংলা ও বাঙালি

বাংলায় লিখবো কি লিখবো না, পারব কিনা, এসব ভাবতে ভাবতে ইংরেজিতে লেখা শুরু করলাম। তখনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল।  শ্রী নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী মহাশয়ের ইউটিউব চ্যানেলে বাঙালি ও বাংলা ভাষার সংকট নিয়ে একটি লেকচার শুনলাম। কত মানুষের সাধনা ও সংগ্রামের ফল আমাদের এই বাংলা ভাষা। আমার মনে একটি দ্বন্দ্ব চলে আসছিল, আমার ভাষা বোধকরি সাহিত্য-উপযোগী নয়। তাহলে সাহিত্য সৃষ্টি করব কী করে। ওনার বক্তৃতা শুনে বুঝলাম এটি আমার মনের অযথা বাধা, এতে কোনও সার নেই। এই স্বরোপিত বাধা শুধু মায়ার খেলা। কত মানুষের কত রকম বাংলা। আজ যে ভাষায় লিখছি বা কথা বলছি, সেটিই কি খাঁটি? আমি যে ভাষায় লিখব সেটিই আমার ভাষা। এত ভাববার কি আছে। তাই, আমার জানা ভাষাতেই আমি আমার মতো করে সাহিত্য রচনা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সবটাই হাতে লিখবো আগে। পরে টাইপ করে নেওয়া যাবে, যেমন এখন করছি। আর হ্যাঁ, নিজের ভাষায় লিখছি, নিজের সাথে কথা বলার মতো করেই। সেখানে তাড়াহুড়ো চলবে না। যখন ইচ্ছে হবে লিখব, ইচ্ছে না হলে লিখব না। তবে লেখা থামাবো না। লেখটা শুরু করেছিলাম একটি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে বলে। সেটায় আসা  যাক। ভাদুড়ী মশাই তার...

হাবিজাবি ১

আমার এ লেখা কারোর উদ্দেশ্যে নয়, মহান সাহিত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টাও নয়, বাজে বইয়ের ভূমিকাও নয়। আমার এ লেখা শুধুমাত্র আমার জন্য। ছোটবেলায় যে পৃথিবীটাকে পেছনে ফেলে এসেছি, তাকে ছুঁয়ে দেখার প্রচেষ্টা মাত্র। আমার পৃথিবী সবুজ ছিল। কচি পাতার সবুজ, পায়ের নরম সবুজ, পুকুরের ঘন সবুজ।  সেই সবুজ এখন আর দেখতে পাই না। হয়ত এখনও সেরকমই সবুজ পৃথিবী, শুধু আমি বুঝি দেখার চোখ হারিয়েছি, মনের সবুজ কালো হয়ে গেছে। সেই কালো ঘষে  মেজে আবার সবুজ করা যায় না? দেখি চেষ্টা করে।  বাংলা ভাষায় লিখতে গেলে, যেকোনো ভাষাতেই লিখতে গেলে, সেটা  ভালো করে জানতে হয়। সেই ভাষায় অনেক পড়াশোনা করতে হয়। পড়াশোনা আর করা হয়না আগের মত। তাই ভাষার প্রতি দক্ষতাও হারিয়েছি। কিন্তু আমার কিছু বলার আছে, তা নিজের ভাষায় নিজের মতই বলব। আত্মম্ভিরতার সুযোগ নেই এখানে, আমার জীবনে প্রাপ্তি খুব বেশি নেই, বা হয়ত আছে অন্যদের তুলনায় বেশি, কিন্তু হরে দরে দেখতে গেলে সবি শূন্যের খাতায় সই। ঠিক যেমন আমার প্রথম চাকরিতে খাতায় সই করে পাকানো কাগজে মাস-মাইনে পাওয়া।  বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের সখ। ফারনান্দ পেশোয়ার সখ ছিল লেখা। এখন যত  অন্তর্ম...