সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জবাবদিহি

আমি হিন্দু, ভগবানে বিশ্বাসী, রোজ কালী ঠাকুরের কাছে মাথা নত করি, ভয়ে নয়, ভালোবেসে। এবং ঠিক সেই কারণেই, পুরোপুরি কমুনিস্ট হয়ে উঠতে পারিনি কোনোদিন।  কমিউনিস্টদের প্রথম শর্ত হলো ভগবানে বিশ্বাসী হলে এখানে তোমার ঠাঁই নেই।  তা বেশ, আমি না হয় ব্রাত্য হয়েই থাকবো, আমি নাহয় সারাজীবন তোমাদের সভার গন্ডি পেরিয়ে অনেক দূরে বসে তোমাদের কথা শুনবো। কিন্তু শুনবো, কারণ তোমাদের কথা আমার সত্যি বলে মনে হয়।  আমি সেই হিসাবে কমিউনিস্ট, সে তোমরা আমায় স্বীকার করো, বা না করো।  মা কালী আমার হৃদয়ে বিরাজমান থাকুক, তোমরা  আমার  মাথায় থাকো।  
আমি সাংবাদিক, চেষ্টা করি এপলিটিক্যাল থাকার। কারণ সেটাই আমার স্বধর্ম। যেখানে অন্যায় হবে, তার প্রতিবাদ করা আমার স্বধর্ম।  যেহেতু আমি ফিনান্সিয়াল সাংবাদিক, আমি আমার মতো করে প্রতিবাদ করি।  আমার লেখায় আমি আমার পাঠকদের কাছে তুলে ধরি সরকারি অক্ষমতাগুলো। আবার যেটা ভালো, সেটাকেও আমি প্রশংসা করি। আমার কেরিয়ারের শুরুতে আমায় যেটা শিখিয়েছিলেন আমার সিনিয়াররা, আমি সেটাই অনুসরণ করে এসেছি, সেটাই করবো। এবং আমার কাছ থেকে কোনো নবীন সাংবাদিক যদি জানতে চায়, আমি তাহলে এটাই তাকে শেখাবো যে আমাদের কাজ হলো একাধারে আয়না, আবার অন্যদিকে চালুনি হওয়া।  আমরা নায়ক নোই, আমরা পরিচালকও নোই।  দর্শক হবার বিলাসিতাও আমাদের নেই।  আমরা হলাম খেরোর খাতা ধরা একদল কেরানি, যারা রোজকার হিসাব নিকেশ মিলিয়ে রাখি।  সেটাই আমাদের স্বধর্ম। আমার মতামত এখানেই শুরু, আর এখানেই শেষ।  
কিন্তু আমি ভারতবাসী।  আমার ভারতবর্ষের প্রতি এক দায়বদ্ধতা আছে, যেটা আমি সংবাদদিকতার আড়ালে লুকিয়ে রাখতে পারি না।  তাই আমার একান্ত ব্যক্তিগত গন্ডির মধ্যে থেকে আমার এই লেখা।  
যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবা-মা, আমার স্কুলের শিক্ষিকা এবং শিক্ষকরা শিখিয়েছিলেন ভারতবর্ষ কাকে বলে।  আমি প্রথম ভারতবাসী হই যেদিন জানতে পারি যেখানে থাকি, সেখানকার জল, হাওয়া ও মাটিতে সবারির সমান অধিকার। আমাকে শেখানো হয় ভারত যেমন আমার, তেমনি আব্দুলের, তেমনি জনের, বা গুরমীতের। এ মাটির জন্য প্রাণ দিতে হলে তাও সাচ্চা, আমার আগে বহু মানুষ এ মাটির জন্য প্রাণ দিয়েছেন।  তারা বরেণ্য, তারা পূজনীয়। আমরা তাদের বলিদান কিছুতেই ব্যর্থ যেতে দিতে পারি না। 
আরেকটু পরে জানতে পারলাম আমাদের একটা সংবিধান আছে, সেখানে নাকি বলা আছে সবাই সমান এ দেশের আইনে। তোমার যদি এই ব্যবস্থা পছন্দ না হয়, তাহলে অন্য কথা যাও বাপু, তুমি ভারতবাসী নও।  
অনেক দেখে, বুঝে, আমাদের তিরঙ্গাকে প্রচুর সেলাম ঠুকে শেষে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি আমার দেশের সংবিধান মেনে চলবো।  সেদিন যথার্থই আমি আমার দেশকে একান্ত ভাবে নিজের বলে মেনে নিলাম। সব বাদবিবাদের মীমাংসা হলো।  
তাই আজ যখন দেখি এক দল মানুষ ধর্মের নামে সেই নিয়মটাকে বদলে ফেলতে  চাইছে, যখন দেখলাম তারা চায় ভারতবর্ষে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রাধান্য চলবে, তখন একটাই কথা মনে হয়, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, এরাই কি আসল দেশদ্রোহী নয়? এদের বিচার হবে না? নাহয় তাদের দেশের মাঁনুষ দায়িত্ব দিয়েছে নতুন নিয়ম বানাবার, কিন্তু তাদের কে তো এইটা বলা হয়নি যে তারা যথেচ্ছাচার করে আমার দেশের ভীতটাকেই উপরে ফেলুক? বাগানের মালি তো বাগানের মালিক নয়।  মালিক তো মানুষ, মালি কেন ঠিক করবে বাগান তুলে বাড়ি হবে কিনা।  মালি যদি তাই করতে চাই, তাহলে তো তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়াটাই নিয়ম। 
মানুষের জীবন নশ্বর, কবি বলেছেন স্ফুলিঙ্গ সম। পরপারে আমায় জবাবদিহি করতে হবে মনুষ্যজীবন নিয়ে কি করলে? তার উত্তরটা জীবন থাকতেই ঠিক করে নিতে হয়। আমার প্রচেষ্টা এইটুকুই যে উত্তরটা যেন এইটুকু হয় যে তেমন কিছু একটা করতে পারিনি বটে, তবে চেষ্টা করেছি তোমার তৈরি করা অন্য মানুষটাকে যথাসম্ভব মর্যাদা দিতে।  এই করতে করতেই জীবনটা কখন শেষ হয়ে গেলো, বড় কিছু করার সময় আর পাওয়া গেলো না।  তেমন ক্ষমতাও তো দাওনি এই ভীরু শরীরে।  তবে আজ একজন ভারতবাসী হয়ে এইটুকু বলতে পারি যে আমি শাসক দলের ঘৃণ্য রাজনীতি মানছি না, মানব না। যদি তাই মেনে নি, তাহলে আজকে আমি হবো দেশদ্রোহী। 
মরে যাবো, দেশের প্রতি নিমকহারামী করবো না।  হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই নাই হোক, কিন্তু দুজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের সংবিধান কে রক্ষা করবোই করবো।  সেটাই আমাদের স্বধর্ম, সেটাই আমাদের দায়বদ্ধতা।  জয় হিন্দ।   






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

তোমাদের জন্য মেমসাহেব, সাহেব।

ইংরেজিতে লিখব না বাংলা? এই ভাবতে ভাবতেই আমার সময় কেটে গেল, লেখা আর হয়ে উঠল না। কোন কিছু শুরু করার আগে উদ্দেশ্যটা ঠিক হওয়া জরুরি। আমার প্রস্তুতি ঠিক ছিল না।  এখন ভাবছি লেখাটা জরুরি, ভাষাটা নয়। আমি যেহেতু দুটো ভাষা জানি, আমি দুটোতেই লিখব। যেটা বাংলায় লিখলে ভাল হয়, সেটা বাংলায় লিখব, যেটা ইংরেজিতে স্বাভাবিক, সেটা ইংরেজিতে লিখব। বাংলায় লিখতে পারলে সব থেকে ভাল হয়, সেটাই আমার মাতৃভাষা, কিন্তু ইংরেজি সহজতর। সেটা হয়ত আমার দুই দশকের ইংরেজি লিখে কাজ করার ফল।  আমি দুটি ভাষাতেই সাহিত্যমানের লেখা লিখতে পারব না। কিন্তু লিখতে ভালবাসি। সব  শেষে একটি ইবুক বানিয়ে আমাজনে বা গুগুলে ছেড়ে দেবো। সেটা অবশ্য এই চাকরিটা ছাড়ার পরেই সম্ভব। যখন সময় আসবে, তখন আমার লেখাগুলি এই বিশাল আন্তরজালে ঠাই পাবে। তার আগে লেখাগুলি তৈরি করা দরকার। কেউ পড়বে না হয়ত, কিন্তু আমার কন্যা শ্রাবস্তি আর ভাগ্নে প্রভেক পড়লেই যথেষ্ট। আমি যখন থাকব না, এই লেখাগুলি হয়ত ওদের একটু শান্তি দেবে। অমরত্বের ইচ্ছে আমার নেই, তবে সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে কথা বলতে পারার লোভ সংবরণ করা কঠিন।  হয়ত এই হাবিজাবি লেখাগুলি ভবিষ্যতের প্রজন্মের কেউ পড়ব...

বাংলা ও বাঙালি

বাংলায় লিখবো কি লিখবো না, পারব কিনা, এসব ভাবতে ভাবতে ইংরেজিতে লেখা শুরু করলাম। তখনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল।  শ্রী নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী মহাশয়ের ইউটিউব চ্যানেলে বাঙালি ও বাংলা ভাষার সংকট নিয়ে একটি লেকচার শুনলাম। কত মানুষের সাধনা ও সংগ্রামের ফল আমাদের এই বাংলা ভাষা। আমার মনে একটি দ্বন্দ্ব চলে আসছিল, আমার ভাষা বোধকরি সাহিত্য-উপযোগী নয়। তাহলে সাহিত্য সৃষ্টি করব কী করে। ওনার বক্তৃতা শুনে বুঝলাম এটি আমার মনের অযথা বাধা, এতে কোনও সার নেই। এই স্বরোপিত বাধা শুধু মায়ার খেলা। কত মানুষের কত রকম বাংলা। আজ যে ভাষায় লিখছি বা কথা বলছি, সেটিই কি খাঁটি? আমি যে ভাষায় লিখব সেটিই আমার ভাষা। এত ভাববার কি আছে। তাই, আমার জানা ভাষাতেই আমি আমার মতো করে সাহিত্য রচনা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সবটাই হাতে লিখবো আগে। পরে টাইপ করে নেওয়া যাবে, যেমন এখন করছি। আর হ্যাঁ, নিজের ভাষায় লিখছি, নিজের সাথে কথা বলার মতো করেই। সেখানে তাড়াহুড়ো চলবে না। যখন ইচ্ছে হবে লিখব, ইচ্ছে না হলে লিখব না। তবে লেখা থামাবো না। লেখটা শুরু করেছিলাম একটি অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে বলে। সেটায় আসা  যাক। ভাদুড়ী মশাই তার...

হাবিজাবি ১

আমার এ লেখা কারোর উদ্দেশ্যে নয়, মহান সাহিত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টাও নয়, বাজে বইয়ের ভূমিকাও নয়। আমার এ লেখা শুধুমাত্র আমার জন্য। ছোটবেলায় যে পৃথিবীটাকে পেছনে ফেলে এসেছি, তাকে ছুঁয়ে দেখার প্রচেষ্টা মাত্র। আমার পৃথিবী সবুজ ছিল। কচি পাতার সবুজ, পায়ের নরম সবুজ, পুকুরের ঘন সবুজ।  সেই সবুজ এখন আর দেখতে পাই না। হয়ত এখনও সেরকমই সবুজ পৃথিবী, শুধু আমি বুঝি দেখার চোখ হারিয়েছি, মনের সবুজ কালো হয়ে গেছে। সেই কালো ঘষে  মেজে আবার সবুজ করা যায় না? দেখি চেষ্টা করে।  বাংলা ভাষায় লিখতে গেলে, যেকোনো ভাষাতেই লিখতে গেলে, সেটা  ভালো করে জানতে হয়। সেই ভাষায় অনেক পড়াশোনা করতে হয়। পড়াশোনা আর করা হয়না আগের মত। তাই ভাষার প্রতি দক্ষতাও হারিয়েছি। কিন্তু আমার কিছু বলার আছে, তা নিজের ভাষায় নিজের মতই বলব। আত্মম্ভিরতার সুযোগ নেই এখানে, আমার জীবনে প্রাপ্তি খুব বেশি নেই, বা হয়ত আছে অন্যদের তুলনায় বেশি, কিন্তু হরে দরে দেখতে গেলে সবি শূন্যের খাতায় সই। ঠিক যেমন আমার প্রথম চাকরিতে খাতায় সই করে পাকানো কাগজে মাস-মাইনে পাওয়া।  বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের সখ। ফারনান্দ পেশোয়ার সখ ছিল লেখা। এখন যত  অন্তর্ম...